AkashNetMBest Websie Site Daly UpdateClick Here To Mobile Version ViewWelcome To Akash Telecom And Mobile Servesing.. Senter +8801948870664 আমাদের এই সাইটের সকল ফ্লাস ফাইল পাসওয়ার্ড ছাড়া, এবং সম্পূর্ন ফ্রী ডাউনলোড করতে পারবেন ৷ এবং সব ফাইল গুলো, ১০০% চেক করা ৷ বিদ্র:-যদিও কোনো কারনে পাসওয়ার্ড দেয়া থাকে , সেটা Download এর উপরে দেখতে পাবেন ৷ ধন্যবাদ ৷ আমাদের আরেকটি সাইট হলো Tips My 24 Back

আবির ও পারির অসম্ভব ভালবাসার গল্প

মনটা প্রচণ্ড খারাপ আবিরের।
জীবনটা তার কাছে হটাত যেন অর্থহীন মনে হচ্ছে। জীবনের প্রতি সামান্যতম কোন ইন্টারেস্টও নেই ছেলেটার। কিন্তু ছেলেটাতো এমন ছিল না! এইতো কিছুদিন আগেও ছেলেটার মুখে সবসময় লাজুক একটা হাসি লেগেই থাকতো! হটাত করে কি হল আবিরের?
রাত এখন ঠিক দুইটা দশ। রেডিয়াল আর্টারীর সামান্য উপরে সদ্য কেনা ব্লেডটা ধরে রেখেছে আবির। জিলেট প্লাটিনাম ব্লেড। তিন টাকা দাম নিয়েছে। কেনার সময় দোকানদারকে জিজ্ঞেস করেছিল সে,
‘ভাই, এটা দিয়ে রগ কাটা যাবে?’
‘যাইব মানে, মানুষ পর্যন্ত মারন যাইব।' আত্মবিশ্বাসের সাথে জবাব দিয়েছে জাকির দোকানদার।
আজকে অবশ্য একটা মানুষকে মারতে যাচ্ছে আবির। তবে ওটা অন্য কেউ না, তার নিজেকেই। সভ্য ভাষায় যাকে আমরা বলি সুইসাইড । হে, ঠিক তাই বলছি, আজ সুইসাইড করবে আবির।
পোঁচ দেয়ার ঠিক আগমুহূর্তে আবির একবার ভাবলো পারির লিখা শেষ মেইলটা একবার পড়ে দেখবে কিনা। 'পারি' নামটা গভীরভাবে মনে পড়তেই তার বুকের মাঝে একসাথে ক্ষোভ, রাগ, ঘৃণা, ভালবাসা ইত্যাদি মিশ্র অনুভূতির সৃষ্টি হল আবিরের। তবে এতে রাগ আর ঘৃণার পরিমাণই এখন বেশি। মেয়েটার প্রতি প্রচণ্ড ক্রোধ তার। সেই ক্রোধের আগুনে সে পারিকেও পোড়াতে চায়। মনে এখন প্রচণ্ড আবেগ ছেলেটার মাঝে।
আবির এখন মনে মনে ভাবছে, পোঁচ দেয়ার সাথে সাথেই তো আর মৃত্যু হবে না তার। রক্তক্ষরণে মারা যেতে নিশ্চয়ই সময় লাগবে। সেই সময়ে পারির প্রতি তার সব অভিমান গুলো রক্ত দিয়ে লিখে রেখে যেতে চায় সে। সে লিখবে "আমার মৃত্যুর জন্য পারি দায়ী’। তবে সে শুধু পারি লিখবে না। ঢাকা শহরেতো অনেক পারি আছে। তাই পুরো নামটাই সে লিখবে 'সাইমা হক পারি'। ঠিকানাটা লিখলে আরও ভাল হয়। পুরাণ ঢাকার ওয়ারি থাকে মেয়েটা। পুলিশ গিয়ে ডাইরেক্ট ধরতে পারবে তাকে। পারি নামটার উপর খানিকটা থু থুও ছিটিয়ে দেবে সে। সবাই দেখুক মেয়েটার প্রতি ওর ঘৃণা কতটুকু!
ভাবতে অবাক লাগে পারি মেয়েটার প্রতি কতই না ভালবাসা ছিল আবিরের। মেয়েটাকে পাগলের মতো ভালবাসত ছেলেটা। পারির কথা ভেবে কতো রাতই না ঘুমায়নি সে। এখন তার সেই ভালবাসা গুলো কোথাই গেল? মহাবিশ্বের ব্লেক হোলের মতো পারির প্রতি তার সব ভালবাসা কি গভীর সমুদ্রে হারিয়ে গেছে? কথা গুলো আরও একবার ভাবতে থাকে আবির।
আবির আর পারির প্রথম দেখা হয়েছিল ব্যাচ প্রোগ্রামের দিন সন্ধ্যায়। সেই সন্ধ্যায় ভার্সিটির মেয়েগুলোকে পেত্নীর মত লাগছিল। এমনকি পারিকেও! আলো অনেক কম ছিল তাই হয়তো এমনটা দেখাচ্ছিল। পর দিন স্নিগ্ধ এক দুপুরে পারিকে দেখার পর ভুলটা ভাঙল আবিরের। একটা মেয়ে এতোটা সুন্দর হতে পারে? চুল, চোখ, নাক, ঠোঁট সবই মায়া ভরা! শুধু গায়ের রংটাই যা একটু শ্যামলা। কিন্তু এ রঙেই তো মেয়েটাকে আরও বেশি মানিয়েছে! এটা ভাবতে ভাবতে দিনটা খুব ভাল করেই চলে যায় আবিরের।
মেয়েটার সাথে খুব ভাল করে পরিচিত হতেও বেশি সময় লাগল না আবিরের। আবির দেখতে অনেক হ্যান্ডসাম একটা ছেলে, আর সে একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট। তাই পারির কাছে পাত্তা পেতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি আবিরের। মেয়েটিও যেন তার জন্যই অপেক্ষা করে ছিল । ধিরে ধিরে ওদের ভালোলাগাগুলো ভালবাসায় পরিণত হতে তাই খুব একটা দেরি হল না।
আবিরের সাথে পারির সম্পর্কটা টিকে ছিল প্রায় তিন বছরের মতো। এই তিন বছরে কতো কিছুই না করেছে ওরা। কতো বিকেল ওরা হাতে হাত ধরে ঘুরে বেড়িয়েছে ওরা। আবিরের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে পারি। পারির চুলে সিঁথি কেটে দিয়েছে আবির। ভবিষ্যৎ নিয়ে কতো কিছুই না ভাবতো তারা! তবে তাদের মধ্যে একটা ঝগড়া লেগেই থাকতো সমসময়। কল্পনাবিলাসী আবিরের পছন্দ ছিল একটা ছোটো মেয়ে বাচ্চা, আর পারির ছিল একটা ছোটো ছেলে বাচ্চা। প্রায়ই এটা নিয়ে অনেক ঝগড়া করতো ওরা। অবশেষে আবিরের কথা মেনে নিয়েছে সে।
আবির বলত, ‘আমার মেয়ের নাম রাখবো আরি’।
‘এ আবার কেমন নাম বাবা?’ মুখ ভেংচে বলেছিল আদৃতা।
'আবিরের প্রথম আ আর পারির শেষটা রি নিলাম। খুব আনকমন হবে নামটা, কি বল?'
- না, এটা ভাল লাগছে না। আচ্ছা নামটা এর চেয়ে অরি রাখলে কেমন হয়?'
- খারাপ না। ওকে ঠিক আছে এবার।
আবিরের সব কথা খুব অবলিলায় মেনে নিত মেয়েটা। আর আবিরের কথাগুলো শুনে মুখ টিপে লাজুক একটা মুচকি হাসি দিত পারি। আবির আরও বলত 'আমার মেয়েকে খুব ভাল একটা ডাক্তার বানাবো। ও আমাকেও ছাড়িয়ে যাবে। আমিতো অনেক কষ্টে কোনরকম পরীক্ষা গুলতে পাস করছি। আর আমার মেয়ে এমনটা হবে না। ও অনেক ভাল একটা ছাত্রী হবে'। রাস্তায় কোন মেয়ে দেখলে আবির বলতো 'আমার মেয়েটাও ঠিক এমন দুষ্ট হবে'। আবিরের এসব কাল্পনিক কথা শুনে মাঝে মাঝে খুব বিরক্ত হতো পারি। 'তুমি একটা পাগল' এ কথাটা প্রায়ই হেসে বলতো পারি। 'আরতো খুব বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না তোমার। আমিতো সামনে ফাইনাল প্রোফেসনাল এক্সাম দিবো। একটু দোয়া করো যাতে পাসটা আমি করতে পারি। পাস হয়ে গেলেইতো আমি ডাক্তার হয়ে তোমাকে বিয়ে করতে পারবো। তাই না?' কথা গুলো খুব ইমশনাল হয়ে বলেছিল আবির। সেই পুরনো কথাগুলো মনে করে আবির যেন আরও অস্থির হয়ে গেল।
মেয়েদের সহজে চেনা যায় না। পারিকেও চিনতে ভুল করেছে আবির। তাকে মনে প্রাণে ভালোবাসে মেয়েটা এমন ধারণাই ছিল তার। ওদের শেষ দেখার সময়ও তো ভালো মানুষটির মত বিদায় নিয়েছিল। কে জানত অবশেষে এমন একটা কান্ড ঘটাবে ডাইনীটা।
তিন তিনটি বছরের সাজানো স্বপ্নগুলোকে জবাই করে গতপরশু বিয়ের পিড়িতে বসেছে পারি। তার বাবার পছন্দের এক ছেলে। ছেলেটা আমেরিকা থাকে। নিউ ইয়র্কের একটা ইউনিভার্সিটি থেকে সদ্য মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ পাস করেছে ছেলেটা। সে তুলনায় সে তো খুব বড় কিছু না। তাকে ধোঁকা দেয়ার এটাই মূল কারণ বুঝতে বাকি নেই আবিরের। বিশ্বাসঘাতিনীটাবিয়ের পরদিনই হুশ করে আমেরিকা চলে গেছে হানিমুন করতে। সাথে তার আধমরা বাপটাকেও নাকি নিয়ে গেছে। খুব ফুর্তিতে আছে নিশ্চয়ই!
পারির এই ফুর্তি দীর্ঘস্থায়ী হতে দিতে চায় না আবির। সে তাকে চরম একটা শিক্ষা দিতে চায়। একসময় তারা কতই না বলতো যে তারা একে অপরকে ছাড়া বাঁচাবে না। এখন কোথাই গেল সেই কথা গুলো? পারিকে ছাড়া সে বাঁচবে না সত্যি কিন্তু সে পারিকে সেখানে নিয়ে যেতে চায়। হয়তো কয়দিন আগে অথবা কয়দিন পরে হবে। এই আর কি।
এ কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ল্যাপটপের সামনে উঠে থাকা ইন্টারনেটে পাঠানো পারির একটা মেইল দেখতে পারল সে। খুব ঘৃণ্য মেইল হবে বলেই মনে হচ্ছে আবিরের। খুব ভালো করেই বোঝা যায় কি লেখা আছে এতে। ‘ভুল হয়ে গেছে, মাপ করে দাও .... ’ এই টাইপ ন্যাকামি কথাবার্তা, এর চেয়ে আর কি হতে পারে। চিঠিটা তুলে বিতৃষ্ণার সাথে পড়তে শুরু করল সে।
প্রিয় আবির,
তোমার কাছে ক্ষমা আমি চাইব না। সে অধিকার আমার নেই। তবু কিছু কথা বলে নিজেকে একটু হালকা করতে চাই আমি। না হলে দম বন্ধ হয়ে আমি মারা যাবো।
মনে পড়ে একদিন তোমাকে আমি বলেছিলাম, জীবনে কাকে আমি সবচে বেশি ভালোবাসি? হ্যা, আমার বাবাকে। খুব অল্প বয়সে মা মারা যাওয়ার পর এই রুগ্ন লোকটি শুধু আমার জন্যই বেঁচে ছিলেন। হতদরিদ্র হয়েও কখনো আমাকে অভাব বুঝতে দেননি। আমার কথা ভেবে ২য় বিয়ে পর্যন্ত করেন নি। নিজের সব সঞ্চয় দিয়ে আমাকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন । বাবার সমস্ত জগত জুড়ে আছি কেবল আমি।
আমার সেই ভালোমানুষ বাবা এখন মৃত্যু শয্যায় । আমি যাকে বিয়ে করতে যাচ্ছি সে আমার এক দুঃসম্পর্কের চাচার ছেলে। সেই চাচার কাছ থেকে এক সময় ৮ লাখ টাকা ধার করেছিলেন বাবা। টাকার জন্য বাবাকে ভীষণ চাপ দিচ্ছিল ওরা। চাচা কথা দিয়েছেন, আমাকে পুত্রবধূ হিসেবে পেলে এ টাকা আর ফেরত দিতে হবে না তাকে। ঋণের বোঝা নিয়ে মারা যেতে চান না আমার ধার্মিক বাবা। সেই সাথে আমার চিন্তায়ও অস্থির তিনি। মনে প্রানে চাইছেন মৃত্যুর আগে সব ব্যবস্থা হয়ে যাক। ওই ছেলের সাথে আমার বিয়ে হোক এটাই তার শেষ ইচ্ছা।
আমার সামনে এখন দুটো পথ খোলা। সহজতম পথ – মৃত্যু । বাবার কথা ভেবে সেটা করতে পারছি না আমি । কঠিনতম পথ – ওই ছেলেকে বিয়ে করা । তাতে বাবার ঋণমুক্তি ঘটবে। সেই সাথে বাবাকে আমেরিকা নিয়ে ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থাও করবে ওরা। আমার চিরদুঃখী বাবার শেষ সময়টুকুতে কিছুটা কষ্ট হয়তো লাঘব হবে।
আমি কঠিন পথটাই বেছে নিয়েছি আবির। বাবার শেষ ইচ্ছা পূরণের জন্য আমার জীবনের সুন্দরতম স্বপ্নকে কোরবানি করে দিচ্ছি । সেইসাথে তোমার দেখা রঙিন স্বপ্নগুলোকেও। জানি, কখনও সুখি হতে পারবো না আমি। সারাজীবন অপরাধী থেকে যাবো তোমার কাছে , যে তুমি আমাকে দেখিয়েছিলে আরি নামের ছোট্ট মেয়েটার স্বপ্ন । তবু বাবার জন্য কিছু করতে পারলাম- আমার সান্তনা শুধু এটুকুই ।
আমাকে ঘৃণা কর আবির। আমাকে অভিশাপ দাও। আর পারলে আমাকে ভুলে যেও..........। বায়।
Regards...
পারি।
মেইলটা পড়ে চোখ দিয়ে যেন অটোমেটিক পানি ঝরতে লাগল আবিরের। শার্টের হাতাটা অলরেডি ভিজে গেছে। তিন টাকা দামের জিলেট ব্লেডটা অনেক আগেই হাত থেকে পড়ে গেছে। ওটা তুলে নেবার ইচ্ছে হচ্ছে না আর।
এবার ঘুমিয়া পড়ল আবির। সকালে ঘুম থেকে উঠে আজ নামাজ পড়েছে সে। দরজাটা খুলে বাইরে বেড়িয়ে আলোতে আসলো। হে, ঠিক তাই, কি চমৎকার হাল্কা রোদেভরা সকাল! ছোটো ছোটো বাচ্চা গুলো স্কুলে যাচ্ছে। একটা সুন্দর মেয়ে তার বাবার হাত ধরে হাঁটছে। কি মিষ্টি দেখতে মেয়েটা। তার সপ্নের অরির মতোই!
অনেকদিন পর কল্পনায় অরিকে দেখতে পেলো আবির।
হ্যাঁ অরি। অরির জন্যই বাঁচতে হবে তাকে। সে না থাকলে অরি নামের ছোট্ট মেয়েটা এই সুন্দর পৃথিবী দেখবে কি করে?
(আবির এবার বুঝতে পেরেছে প্রতিটি পুরুষের ভেতরেই একজন বাবা বাস করেন আর সেই স্বপ্নগুলো অনেকটা সপ্নের মতোই থাকে...। হয়তো কখনো তা বাস্তব হবে। আবার হয়তো............

No comments:

Post a Comment